কাহিনী সামান্য ২

কাহিনী সামান্য ২

আমার বন্ধু রোকেয়া ‘‘not at all intelligent’’

আমার বন্ধু বেগম রোকেয়া নিবিষ্ট পড়ুয়া। ফলে পরীক্ষার ফলাফল বরাবর ভাল। ডাক্তার হয়েও ক্ষান্ত দিল না। বিয়েও করলো ডাক্তারকে। তারপর আরও পড়া চালিয়ে গেল। পিএইচডি শেষ করলো। এখন সে প্রফেসর। এমন ভাল ছাত্র/ছাত্রী অনেকেই হয়তো আছেন। তারা ডাক্তার. প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার অনেক কিছুই হয়তো। তবে রোকেয়া বা আদর করে রুকু ডাকা হয় যাকে তার পড়াশুনার পিছনে মা-বাবাকে তেমন কোন অর্থ খরচ করতে হয়নি। ওর ভাইবোনদের মাঝেও ডাক্তার, বুরোক্র্যাট, ডিপ্লোম্যাট সবই আছে। এইসব পেশাগত সাফল্য অর্জনের জন্য প্রাইভেট স্কুলে যেতে হয়নি ওদের। যতদূর জানি রুকুর সন্তানরাও ভাল করেছে পড়াশুনায়।

এমন একজন বন্ধুকে কেন ‘not at all intelligent’ বলছি সে ভারী মজার গল্প। আমরা ক্লাস ফাইভ শেষ করে সিক্সএ উঠেছি। রোকেয়া প্রথম হয়েছে। মানে আমাদের ফার্স্ট গার্ল। প্রথম হয়েছে তাই বলেই ওকে মনে রেখেছি তা নয়। ও সবার সাথেই মিশতো। ‘এ প্লাস’ ছাত্রীরা সাধারনত কেমন এক অহমিকা নামে অসুখে ভোগে। রুকু ওই অসুখে পড়েনি।

ছোটবেলাতেই দেখেছি হৈ হুল্লোড় প্রবণতা ওর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিলনা। তবে কারোর সাথে কথাবার্তায় কখনোও অনিচ্ছুক দেখিনি। বুদ্ধিমতী, সহজ সরল, বন্ধুবৎসল মেয়ে ছিল রুকু।

আজও যখন ওর সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয় ও দরদ নিয়ে সহপাঠীদের খবরাখবর দেয়। কার মায়ের অসুখ দেখতে গিয়েছিল, কার মেয়ের বিয়েতে গিয়ে বন্ধুদের অনেককে দেখে আমার কথা মনে পড়েছে, কোন এক বন্ধুর কঠিন অসুখের কথা বলে মন খারাপ করছিল। পেশাগত কাজে পৃথিবীর নানা শহরে সেমিনার সিম্পোজিয়ামে প্রায়ই যেতে হয় ওকে। ফলে এক বন্ধুর কুলখানিতে যেতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেছিল।

তো সেই ক্লাস সিক্সের ঘটনা বলি। ইংরেজীর শিক্ষিকা ঢুকলেন ক্লাসে। ইনি নতুন। আগে উনার সাথে আমাদের কখনো ক্লাস হয়নি। মিষ্টভাষী আপা। এক এক করে সবার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন। রুকুর নাম শুনে বললেন
-বেগম রোকেয়া বাহ!
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম
-আপা রোকেয়া আমাদের ফার্স্ট গার্ল
-ওহ তাই, ঠিক আছে আসো তবে বোর্ডে; ইংরেজীতে লিখ ‘রোকেয়া মোটেও বুদ্ধিমতী নয়’

আমি তখন ভাবছি যে আরে এই ট্রান্সলেস্নতো আমিই পারি! আমাদের ভাল ছাত্রী রোকেয়া ওতো আরও কঠিন ট্রান্সলেস্ন পারবে। ফর্সা রুকু লজ্জায় লাল হয়ে ঝট্ করে উঠে সাদা চক দিয়ে কালো বোর্ডে লিখলো ‘Rokeya is not at all intelligent’। অতঃপর রুকু ছিল তার খুব প্রিয় ছাত্রী।

 


Place your ads here!

Related Articles

বাদল দিনে বাদল ধারা

ক্যানবেরার ছোট্ট বাঙালি কমিউনিটিতে বেশ কয়জন গুণী কবি- সাহিত্যিক, গীতিকবি, কণ্ঠ শিল্পী, তবলা বাদক আছে। ফেসবুক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এদের

রোহিঙ্গা সমাচার

৪৭ এর শেষ বিভাগ এক কারন। যতটুকু জানি ৪৭ এ রহিংগাদের ব্যপক একটা অংশ তদানিন্তন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো, বেশ কিছু

ফাঁসির মঞ্চ যুদ্ধাপরাধী সাঈদিকে ডাকছে

ফজলুল বারী: ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিচিন্তায় প্রতি সপ্তাহে রাজাকারদের তালিকা ছাপা হচ্ছিল। এই তালিকাটি ছিল আমার সারাদেশ পায়ে হেঁটে

4 comments

Write a comment
  1. Bakul
    Bakul 7 August, 2017, 17:06

    That’s a funny story.
    We didn’t know about it, even though we were just nearby.
    The story certified that “Ruku” our Rukapa, was “class topper” since the beginning of her career. She upholds the tradition till end. Thanks for recalling and publishing it on social platform.

    Reply this comment
  2. Bakul
    Bakul 7 August, 2017, 17:16

    Thanks; Shahna Apa for recalling such a minor but memorable “Khahini.”
    “Ruku”, our Rukapa” was class topper since the beginning.
    You honored a true friendship also.

    Reply this comment
  3. Dilruba Shahana
    Dilruba Shahana 9 August, 2017, 01:06

    It seems to me that the kahini Shamannaya 2(though not oshammannya) makes you happy to recall about Ruku’s perseverance. Once Ruku and I had chance to see White Night(21st June) at St.Petersbarg(the then Leningrad) while listening ABBA’s famous song ‘Can you hear the drum Fernando'(people believe this song is about Che)

    Reply this comment
  4. Rafika
    Rafika 10 August, 2017, 22:51

    Very nice short story about Dr Rokeya written by her childhood friend. Friendship is about being accepted unconditionally. Based on the story it seems Dr Rokeya has been high achiever all her life but her friend remembers her because she is a kind and caring person not for her achievements.

    Reply this comment

Write a Comment