‘ক্রিস্টিয়ান ডিওর’ এর ৭০ বছর

‘ক্রিস্টিয়ান ডিওর’ এর ৭০ বছর

মেলবোর্নের ন্যাশনাল গ্যালারি অফ ভিক্টোরিয়াতে চলছে “হাউস অফ ডিওর ” এর এক্সিবিশন যেখানে এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডটির গত ৭০ বছরের ইতিহাস তাদের তৈরীকৃত ডিসাইনগুলোর মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে।  ইউরোপের ‘হট কট্যুর (Haute Coture) ‘ শব্দটির সাথে পাঠকদের একটু পরিচয় করিয়ে দেয়া দরকার। উইকিপেডিয়া বলছে
haute couture :expensive, fashionable clothes produced by leading fashion houses.
“rails of haute couture” the designing and making of haute couture clothing.
noun: haute couture
“the champions of haute couture insist that it can be as visionary as any art form”

শুধু শাব্দিক অর্থে এর মানে বোঝা একটু দুরূহ একারণে যে,  আমরা সাধারণত যেসব কাপড় পরিধান করি এগুলো অনেকগুলো কপি হয় এবং হট কট্যুর হিসেবে যেগুলো তৈরী হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় একমাত্র। বিখ্যাত ডিসাইনাররা তাদের কল্পনা, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা ব্যবহার করে তৈরী করেন এরকম একেকটি অত্যন্ত বিরল সৃষ্টি। চিত্রশিল্পীদের জন্য যেমন ক্যানভাস, এসব ডিসাইনারদের ক্যানভাস হচ্ছে পোশাক। এরকম ১৪০ টি পোশাকের সমাহার নিয়ে হাউস অফ ডিওর এর এই আয়োজনটি আপনাকে এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডটির গত ৭০ বছের ইতিহাসের পাতা ঘুরিয়ে আনবে।  ৮ জন ডিসাইনার গত ৭০ বছরে ডিওরের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এর দায়িত্ব পালন করেছেন (ছবি ২ দ্রষ্টব্য), যথাক্রমে ক্রিস্টিয়ান ডিওর নিজে, ইভস সাঁ লরা, মার্ক বোহান, জিয়ানফ্রানকো ফেরে, জন গাল্লিয়ানো, বিল গেটেইন, রেফ সিমন্স এবং বর্তমান ডিরেক্টর মারিয়া গ্রাজিয়া চিউরি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এর মধ্যে শুধুমাত্র মারিয়া যিনি ২০১৬ থেকে এই দায়িত্বে আছেন, ছাড়া সবাই পুরুষ যারা এই ৭০ বছর মহিলাদের জন্য হট কোট্যুর ডিসাইন করে এসেছেন।

শুরুতেই বলে নেই ক্রিস্টিয়ান ডিওর সম্পর্কে, ১৯৪৭ সালে যাত্রা শুরু করে হাউস অব ডিওর (ছবি ১ দ্রষ্টব্য), বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বাজারে ক্রিস্টিয়ান ডিওর ফ্রান্সকে ফ্যাশন দুনিয়ার পথিকৃৎ হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং শ্যানেল এবং অন্যান্য ডিসাইন হাউসের হাত ধরে প্যারিসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান যা এখনো বিশ্বের এক নাম্বার ফ্যাশন ক্যাপিটাল এর স্থানটি ধরে রেখেছে। এখনো বিশ্বায়নের এ যুগে এসেও দিক নির্দেশনার জন্য গোটা দুনিয়া প্যারিসের দিকে তাকিয়ে থাকে।

১৯৫৭ সালে হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রঘটিত অসুখে মৃত্যুবরণ করেন ফ্রান্সের এই আইকনিক ডিসাইনার। শূন্যতায় ভুগতে থাকা ডিওর হাউস এক অখ্যাত অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিসাইনার এর ঘাঁড়ে দেয় এই দুরূহ দায়িত্ব, যার নাম ওই সময়ে কেউ জানতো না, মানুষটি আর কেউ নন ফ্যাশন জগতের অন্যতম পুরোধা স্বনামখ্যাত ‘ ইভস সাঁ লরা’ (বাংলাদেশে আমরা যা YSL নামে চিনি ), হ্যাঁ ইনিই সেই বিখ্যাত ডিসাইনার যিনি ডিওর এর দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে এবং ছিলেন মাত্র ৩ বছর এবং এর অল্প সময়েই তিনি ডিওরকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ডিওর এর দায়িত্বে অব্যাহতি নিয়ে নিজের ব্র্যান্ডকে নিয়ে কাজ করেন তিনি, ২০০৮ এ এই ফ্যাশন দিকপালের জীবনাবসান হয়।

১৯৬০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন মার্ক বোহ্যান, দীর্ঘ ২৯ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে তিনি অবসরে যান তিনি যদিও ফ্যাশনিসটারা বলেন যে মার্ক খুব একটা এক্সপেরিমেন্টাল কিছু করতে পারেননি এবং ডিওরের ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে এই বছরগুলোতে। জিয়ানফ্রাঙ্ক ফেরে ফ্যাশন দুনিয়াকে আবার নতুন করে হাউস অব ডিওরের দিকে ফেরান। জন গাল্লিয়ানো সেন্ট্রাল সেইন্ট মার্টিনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র যিনি যিভনচি (Givenchy), ক্রিস্টিয়ান ডিওর এর মতো ব্র্যান্ডগুলোর হেড ডিসাইনার হিসেবে কাজ করেছেন যিনি তার কাজে একজন সারিয়ালিস্ট অথবা নান্দনিকতাবাদী, যিনি ডিওরকে আরো বিশাল উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তার ভয়ানক এবং অদ্ভুতুড়ে কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে ( ছবি ৩,৪ দ্রষ্টব্য ) আমি নিজে এই লোকের একজন ভক্ত। এনার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে আলেক্সান্ডার ম্যাকুইনের বন্ধু এবং এই দুজনকে ফ্যাশন জগতে নান্দনিকতার গুরু হিসেবে মানা হয়। জনের বেশ কিছু ডিসাইন করা পোশাক দেখতে পাবেন এই প্রদর্শনীতে।

 

গেটেইন ছিলেন মাত্র ৩ বছর এবং এর পর দায়িত্ব নেন এখনো ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপিয়ে যাওয়া রেফ সিমন্স এবং ইনিও দায়িত্বে ছিলেন ৩ বছর। গত বছর প্রথমবারের মতো হেড ডিসাইনার এর দায়িত্ব পান মারিয়া এবং প্রথম মহিলা ডিসাইনার হিসেবে তিনি ডিওরকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন হট কোট্যুরের তারকাখচিত মানচিত্রে। প্রদর্শনীতে আরো দেখতে পাবেন ডিওরের পারফিউম, জুতা এবং অন্যান্য এক্সসেসরিজ। আপনি যদি আর্টের সমজদার হন আর ইতিহাসে আগ্রহ থাকে তাহলে মেলবোর্নে থেকে এই প্রদর্শনীতে না গেলে পস্তাবেন। অসাধারণ ডিসপ্লে এবং সাঁজ আপনাকে ইতিহাসের সোনালী সময়গুলিতে নিয়ে যাবে এই অসাধারণ ডিসাইনারদের হাত ধরে। ডিওরের পুরো ৭০ বছরকে চারটি থিমে ভাগ করে ডিসপ্লে সাজিয়েছে এনজিভি, আর যথাক্রমে এগুলো হচ্ছে লাইন, দা ফ্লাওয়ার,দা এইটিন্থ সেঞ্চুরি এবং দা নিউ লুক। আপনি যদি আর্টের সমজদার নাও হন তবুও উপভোগ করবেন এই বিশ্বজোড়া জনপ্রিয় হাউসটির সমৃদ্ধ ইতিহাস।

 

 

ক্রিস্টিয়ান ডিওরের ১৯৫৬ সালের একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি ” আমার পোশাকগুলো হচ্ছে কল্পনা, কিন্তু দমিয়ে রাখা কল্পনা যেগুলো স্বপ্নের রাজ্য পেরিয়ে প্রতিদিনের পৃথিবীর পরিধেয় হিসেবে সৃষ্টি করেছি। ”  প্রদর্শনী চলবে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত, বেরিয়ে আসুন না !!!

 



Place your ads here!

Related Articles

Life time achievement for Bangladeshi Scholar in USA

[Dr Pial Das, Associate professor, Lamar University, Texas, USA, is younger brother of Dr Parag Das, who works as a

Salman Khan at Rice University's 2012 commencement Speece

সফলদের স্বপ্নগাথা | শিখতে হবে সবখানে | সালমান খান | তারিখ: ২৩-০৫-২০১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান খানের জন্ম ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের

Message of High Commissioner on the Occasion of Sharodio Durga Pula

Date: 30 September 2011 Message of High Commissioner on the Occasion of Sharodio Durga Pula The main essence of all

2 comments

Write a comment
  1. Aparajita
    Aparajita 21 September, 2017, 20:25

    বাহ! দারুণ লিখেছো তো!
    কত অজানা ছিল… অনেক কিছু জানলাম। 🙂
    কিপ রাইটিং।

    Reply this comment

Write a Comment