খালেদার সাজা একটি স্মরনীয় রায়, কিন্তু …
ফজলুল বারী: এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। এ লেখা যখন লিখছি খালেদা জিয়া তখন ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের বিশেষ এবং একমাত্র বন্দিনী। কারন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করার পর সাবেক এই কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন আর কোন বন্দী থাকেননা। এরশাদের পর খালেদা জিয়াই সেখানে উচ্চতর গুরুত্বপূর্ণ ভিভিআইপি বন্দিনী। এরশাদের পর দুর্নীতির মামলায় জেল হলো খালেদা জিয়ার। বাংলাদেশের রাজনীতির এটি আরেকটি উজ্জ্বল ঘটনা। দুর্নীতির অভিযোগে অচিন্ত্যনীয় আরেকটি বিচার হলো। কিন্তু এতে লাভ হলো কী? এ বিষয়টিই এখানে আলোচনা করবো।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগটি বেশ কাঁচা বুদ্ধির! অথবা ক্ষমতায় গেলে অনেক মানুষের স্বাভাবিক হুশ-বুদ্ধি লোপ পায় এটি যেনো সেই নজির! এই মামলার অভিযোগটি খালেদার ১৯৯১-১৯৯৬’র শাসন সময়কার। জিয়ার নামে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে বিদেশ থেকে টাকা আনা হয়েছিল। সেই টাকা একটি ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়। সেই টাকা আবার ট্রান্সফার করা হয় একাধিক একাউন্টে। কিন্তু সেই এতিমখানা আর হয়নি। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এসে ক্ষমতায় থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি এতিমখানা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তখনও তারা এই মামলাটি করেনি! মামলাটি করেছে ১/১১’এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনেকগুলো মামলা হয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে প্রত্যাহার করা হয় শেখ হাসিনার মামলাগুলো। এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরলে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলতো। এসব জানতে বুঝতে বাংলাদেশের রাজনীতির জ্যোতিষ হবার দরকার নেই।
বিএনপি দলটিতে দেশের সবচেয়ে ঝানু আইনজীবীরা আছেন। এই মামলার প্রমানপত্রের কাহিনীগুলো তারা জানেন। সে কারনে এ মামলাটি বিলম্বিত করার জন্যে যত প্রক্রিয়া হতে পারে সবই করেছেন খালেদার আইনজীবীরা। মামলার শুনানির দিন দেখে হরতাল দেয়া হয়েছে। অসুস্থতার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বারবার আদালতে আসেননি। আদালত-বিচারকের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বারবার যাওয়া হয়েছে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে। উচ্চ আদালতে একেকদফা সফল হবার পর মামলাটি আবার নতুন কোর্টে শুরু করতে গিয়ে সবকিছু শুরু করতে হয়েছে নতুন করে। এভাবে মামলাটি দশ বছর টেনে নিয়ে গেছে বিএনপি। মামলাটির শেষ পর্যায়ে এসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলতে শুরু করেন এই মামলার বিষয়বস্তু ভূয়া। খালেদা জিয়াও বলেন তিনি নির্দোষ, এক টাকারও দুর্নীতি হয়নি। বরঞ্চ ব্যাংকের টাকা সুদে-আসলে তিনগুন হয়েছে। কিন্তু এতিমখানাটি কোথায় বা কেনো হলোনা এর উত্তর খালেদা জিয়া বা তার আইনজীবীরা আদালতকে বা দেশবাসীকে দেননি।
বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের মধ্যে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়। জনতা টাওয়ার মামলায় এরশাদের যখন সাজা হয় তখনও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেশি ছিলোনা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধের অভিযোগটিও আড়াই কোটি টাকার কম। আজকের এরশাদ-খালেদার কাছে যে এমন টাকাপয়সা ডালভাত তা ওয়াকিফহালরা জানেন। কিন্তু জনতার টাওয়ার মামলার মতো এ মামলার দালিলিক প্রমানাদি এমন শক্ত ছিলো যে সাজা এড়ানোর সুযোগ ছিলোনা। কিন্তু এই সাজাতেও বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের কোন উপকার হলো কী? আমার মতে না। এরশাদের বিচারের পরও দেশে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বা কমেনি। বরঞ্চ তেড়েবেড়ে বেড়েছে।
কারন বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিটি এখন দুর্নীতিবান্ধব।এদেশে কেউ পাঁচ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে না পারলে এর শক্ত বিচার হয়। কিন্তু পাঁচ কোটি বা পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিচার সচরাচর বিচার হয়না। আরেকটি বিষয় আছে। সবাই জানেন বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। কিন্তু এদেশে অমুক অমুক পরিবারের কেউ দুর্নীতি করেন বা করতে পারেন এটি দলগুলোর নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেননা অথবা মানতে নারাজ। এই যেখানে দেশটির আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেখানে দুর্নীতি কমবে কি করে?
এই মামলা নিয়ে বিএনপির আপাত আরেকটি সাফল্য উল্লেখ করার মতো। ১/১১’এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের মামলাটি আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এটি বলতে বলতে তারা জনমনে এক রকম বিশ্বাসযোগ্য করে ফেলেছে! যে এতিমখানার নামে টাকা, সেই এতিমখানা আজ পর্যন্ত অস্তিত্বহীন কেনো? এই প্রশ্নটি জনেজনে প্রশ্ন করে দেখুন। মোটামুটি উত্তর আসবে ‘এই হলো আর কী! এমন সুযোগ পেলে সবাই এক-আধটু করে!’ এরজন্যে বলছি আলোচিত স্মরনীয় একটি দুর্নীতির প্রাথমিক বিচার হলো। কিন্তু দূর্ভাগ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যাশার ঘৃনা সৃষ্টি হলোনা! এই বিচার আমার কাছে ইতিবাচক ভিন্ন কারনে। এক।। দুর্নীতির বিচার হলো। দুই।। এখনকার দুর্নীতি যদি বিচারবিহীন থাকে সে দুর্নীতিরও একদিন বিচার হবে। এই অংকটি যাতে কেউ ভুলে না যান। অতএব সাধু, সাবধান!!
Related Articles
Enacting Law to Regulate Hartal
The culture of frequent hartals is coming back to Bangladesh, which is damaging for the economy, the country’s image, and
Dancing is my passion – Purabi Permita Bose
Purabi Permita Bose a very well-known person as a Bangladeshi traditional dancer in Sydney community. She got her first lesson
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রবাসে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো
দণ্ডিত গওসুল! লজ্জিত বাংলাদেশ ! লেবানন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসুল আযম। বাংলামেইল২৪ডটকমে উৎপল দাসের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে